রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন

ভূগর্ভে রহস্যে মোড়া অন্য দুনিয়া

ভূগর্ভে রহস্যে মোড়া অন্য দুনিয়া

প্রতি নিয়ত ব্রহ্মাণ্ডের নিত্য-নতুন রহস্যের উদ্ঘাটন হয়েই চলেছে। তবে এই পৃথিবীর অনেক কিছুই যে এখনও চেনা বাকি রয়েছে গিয়েছে, আরও একবার মিলল তার প্রমাণ। লোকচক্ষুর আড়ালে, পৃথিবীর অন্তরেও যে নিত্য-নতুন পরিবর্তন ঘটে চলেছে, ভূপৃষ্ঠের নিচেই যে আরও একটি রহস্যে মোড়া দুনিয়া রয়েছে, সামনে এল ফের একবার।

পৃথিবীর অন্তর, ইংরেজিতে যাকে ‘আর্থ কোর’ বলা হয়, গঠন, প্রকৃতি সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ভূমিকম্প এবং পরমাণু বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ থেকে এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক ধারণা পেয়ে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী যেমন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলার পাশাপাশি নিজের অক্ষেও পাক খেয়ে চলেছে, পৃথিবীর অন্তঃস্থলও তেমন স্থির নয়। বরং গতিশীল। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে তার গতিতে পরিবর্তন এসেছে বলে উঠে এলো দাবি।

ন্যাচরাল জিওসায়েন্স জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে চিনের পেকিং ইউনিভার্সিটির গবেষক শিয়াওদং সং এবং ই ইয়াং জানিয়েছেন, ২০০৯ সাল নাগাদ পৃথিবীর অন্তঃস্থলের আবর্তগতি সাময়িক থেকে যায়। তারপর পরিবর্তন ঘটে গতিপথে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর অন্তঃস্থলের গতি ভূপূষ্ঠের তুলনায় আপেক্ষিক। পৃথিবীর অন্তঃস্থল আসলে আগ-পিছু হতে থাকে,  দোলনা ঠিক যে ভাবে দোলে। একবার আগ-পিছু করতে সময় লেগে যায় প্রায় সাত দশক। অর্থাৎ প্রতি ৩৫ বছরে গতি পরিবর্তন করে পৃথিবী। এর আগে, ১৯৭০ সাল নাগাদ পৃথিবীর অন্তঃস্থলের গতি পরিবর্তন হয়েছিল বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সেই নিরিখে ২০৪০-এর মাঝামাঝি পরবর্তী গতি পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে থমকে গিয়ে, পৃথিবীর অন্তঃস্থল উল্টো গতিপথ ধরেছে বলে দাবি করা হয়েছে নয়া গবেষণাপত্রে।

বিগত ছয় দশকে পৃথিবীর অন্তঃস্থল সম্পর্কে যা জানা গিয়েছে, তা হল, ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ হাজার কিলোমিটার নিচেই আরও একটি রহস্যময় দুনিয়া রয়েছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য মূলত গলিত অবস্থায় রয়েছে ওই অংশ। তার বহির্ভাগে রয়েছে তরল ধাতব আস্তরণ।

তাই পৃথিবীর অন্তঃস্থলের গতিপথ পাল্টানোর বিষয়টিকে ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী নিজের অক্ষে যে ভাবে ঘুরে চলে, তার উপরই দিন-রাতের দৈর্ঘ্য নির্ভর করে। তাই দিন-রাতের দৈর্ঘ্যে গত কয়েক দশকে যে যে পরিবর্তন এসেছে, পৃথিবীর অন্তঃস্থলেও তার প্রভাব পড়েছে।

তবে পৃথিবীর অন্তঃস্থলের গতিপথ পরিবর্তনে ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী মানগজগতের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। তবে ভূপৃষ্ঠের নিচে, পৃথিবীর অন্তরে যতগুলি স্তর রয়েছে, তাদের মধ্যে যে পারস্পরিক সংযোগ রয়েছে, সে ব্যাপারে একমত সকলে।

চিনের বিজ্ঞানীদের দাবি, তাদের এই আবিষ্কার আগামী দিনে গবেষণার পথ আরও প্রশস্ত করবে। গোটা পৃথিবী যে আদতে সমন্বিত গতিশীল গঠনতন্ত্রের অংশ, আগামী দিনে কোনো সন্দেহ থাকবে না তা নিয়ে। তবে নয়া এই গবেষণাপত্র বিজ্ঞানীদের নতুন করে ভাবাতেও শুরু করেছে। পৃথিবীর অন্তঃস্থলে যে অনেক রহস্য চাপা পড়ে রয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত তারা। ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ভূকম্পনবিদ জন ভিন্দেলের মতে, বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। নিত্য নতুন তথ্য তুলে আনছেন। কিন্তু সম্পূর্ণ ধারণা গড়ে তোলার জন্য তা এখনও যথেষ্ট নয়।

এর আগে, গত বছর ভিন্দেল নিজের গবেষণায় দাবি করেছিলেন যে, পৃথিবীর অন্তঃস্থলের গতি প্রতি ছ’বছর অন্তর পরিবর্তিত হয়। ১৯৬০-এর শেষ দিকে এবং ১৯৭০-র গোড়ার দিকের দু’টি পরমাণু বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গকে পর্যবেক্ষণ করে ওই দাবি করেন তিনি। ২০০১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পৃথিবীর অন্তঃস্থলের গতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং তার পর থেকে বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বলেও দাবি করেন তিনি।

শেয়ার করুন .....




© 2018 allnewsagency.com      তত্ত্বাবধানে - মোহা: মনিকুল মশিহুর সজীব
Design & Developed BY ThemesBazar.Com